বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম
বাবা মারা যাওয়ার পরে সাধারণত তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি সন্তানেরাই উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকেন। তাই আজকের আলোচনায় আমরা জানবো বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম।
অনেক সময় বাবা মার মৃত্যুর পূর্ব তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি ফয়সালা করে যেতে পারেন না। এই সম্পত্তির ভাগ বরটা নিয়ে অনেক সময় উত্তরাধিকারদের মধ্যে নানাভাবে বিবাদ তৈরি হয়।
এই ধরনের সমস্যা থেকে উত্তরের জন্য আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি সন্তান সন্ততির মধ্যে ভাগের নিয়ম সম্পর্কে।
যাতে আপনাদের এই ধরনের সম্পত্তি ভাগের বিষয় কোনো সমস্যা না হয়। তাহলে চলুন জেনে আসি বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম বাংলাদেশ।
বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম
বাবার মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারগণ নিদিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী ভাগ পাবে। ইসলামি ও রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা সন্তানরা ভাগ পাবেন।
বাবার একজন স্ত্রী ও কন্যা সন্তান থাকলে স্ত্রী পাবে মোট সম্পত্তির ১/৮ অংশ এবং কন্যা পাবে মোট সম্পত্তির ১/২ অংশ। বাকি সম্পত্তির অংশ গুলো আসাবা হিসাবে বাবার ভাই, বোন যারা জীবিত আছেন তারা ভাগ পাবেন।
বাবার যদি শুধু পুত্র সন্তান থাকে তাহলে সম্পত্তির সম্পূর্ণ ভাগ সেই পাবে। শুধু কন্যা সন্তান থাকলে ১/২ অংশ আর পুত্র এবং কন্যা উভায় থাকলে ২ঃ১ অনুপাতে পুত্র-কন্যা ভাগ পাবে।
আমাদের মধ্যে অনেকে মনে করেন বাবার সম্পত্তির ভাগ ছেলে সন্তানগণ বেশি পায় আর মায়ের সম্পত্তির ভাগ মেয়ে সন্তানগণ বেশি পায়। আসলে সম্পত্তি ভাগের ক্ষেত্রে এমন কোনো নিয়ম নেই।
বাংলাদেশী আইন অনুসারে বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম
একজন মৃত্যু ব্যাক্তির সম্পত্তি সাধারণত তার ৪ শ্রেণীর ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হয়। এই ৪ শ্রেণীর ওয়ারিশ গুলো হলো,
- স্ত্রী
- কন্যা
- পুত্র
- আসাবাগণ
বাংলাদেশী আইন অনুসারে মৃত্যু ব্যাক্তির ওয়ারিশগণ যেভাবে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ভাগ পাবেন তার নিচে আলোচনা করা হয়েছে।
- মৃত্যু ব্যাক্তির একজন স্ত্রী ও কন্যা থাকলে মোট সম্পত্তির ১/৮ অংশ পাবে স্ত্রী এবং ১/২ অংশ পাবে কন্যা। তাছাড়া বাকি সম্পত্তির বাকি অংশ গুলো মৃত্যু ব্যাক্তির ভাই, বোন যারা জীবিত আছেন তারা পাবেন।
- বাবার যদি শুধুমাত্র একজন পুত্র সন্তান থাকে তাহলে সম্পূর্ণ সম্পত্তি সে একাই ভাগ পাবেন। আর একাধিক পুত্র সন্তান থাকলে সবাই সমান ভাবে ভাগ পাবেন।
- মৃত্যু ব্যাক্তির একজন স্ত্রী ও একাধিক কন্যা সন্তান থাকলে মোট সম্পত্তির ১/৮ অংশ ভাগ পাবেন স্ত্রী। আর কন্যা পাবেন মোট সম্পত্তির ২/৩ অংশ, যা অন্য কন্যাদের সমান ভাবে ভাগ করে দিতে হবে।আর বাকি অংশ গুলো মৃত্যু ব্যাক্তির পিতা, ভাই, বোন যারা জীবিত আছেন তারা ভাগ পাবেন।
- মৃত্যু ব্যাক্তির শুধুমাত্র স্ত্রী থাকে (যদি কোনো সন্তান না থাকে) তাহলে মোট সম্পত্তি ২ ভাগে ভাগ করা হবে। স্ত্রী পাবে মোট সম্পত্তির ১/৪ অংশ। আর বাকি সম্পত্তি পিতা, ভাই, বোন যারা জীবিত আছেন তারা ভাগ পাবেন।
- মৃত্যু ব্যাক্তির পুত্রের কন্যা মোট সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবেন যখন একজন মাত্র পুত্রের কন্যা থাকে। একাধিক কন্যা থাকলে সম্পত্তির ২/৩ অংশ ভাগ পাবেন এবং সবাই সমান ভাগ পাবেন। আর যদি মৃত্যু ব্যাক্তির একজন কন্যা থাকে তাহলে পুত্রের কন্যা মোট সম্পত্তির ১/৬ অংশ ভাগ পাবেন।
- মৃত্যু ব্যাক্তির পুত্র, কন্যা, পুত্রের পুত্র, পুত্রের কন্যা, আপন ভাই, পিতা কেউ না থাকে তাহলে মৃত্যু ব্যাক্তির আপন বোন শোয়ারার হিসাবে সম্পত্তি ভাগ পাবেন। একজন বোন থাকলে মোট সম্পত্তির ১/২ অংশ ভাগ পাবেন এবং একাধিক বোন থাকলে মোট সম্পত্তির ২/৩ অংশ সবাই সমান ভাগ পাবেন।
- মৃত্যু ব্যাক্তির পুত্র, কন্যা, পুত্রের পুত্র, পুত্রের কন্যা, আপন ভাই, পিতা, বৈমাত্রেয় ভাই কেউ না থাকলে বৈমাত্রেয় বোন থাকলে মোট সম্পত্তির ১/২ অংশ ভাগ পাবেন এবং একাধিক বৈমাত্রেয় বোন থাকলে ২/৩ অংশ ভাগ পাবেন।
মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন
ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী আমাদের দেশে বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ভাগের ক্ষেত্রে ইসলামি নিয়ম অনুসরণ করা হয়। ইসলামি নিয়ম অনুযায়ী সম্পত্তি ভাগের ক্ষেত্রে ওয়ারিশদের মধ্যে মতের অমিল লক্ষ্য করা যায়।
তখন তাদের এই বিবাদ অনেক সময় আদালত পর্যন্ত গড়ায়। তাই এই বিবাদের প্রতিরোধ করার জন্য প্রত্যেক মুসলমানের উচিত ইসলামি উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে ধারণা রাখা।
ইসলামি নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যু ব্যাক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়াকে ফারায়েজ বলা হয়।
একজন মুসলিম ব্যাক্তির মৃত্যুর পরে তার সম্পত্তি ভাগ করার পূর্বে অবশ্যই কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে। যেমন: মৃত্যু ব্যাক্তির কাছে কেউ ধার দেনা থাকলে তা পরিশোধ করা, মৃত্যু ব্যাক্তি দান বা উইল করে গেলে প্রাপককে ভাগ দেওয়া এবং স্ত্রীর দেনমোহর বাকি থাকলে পরিশোধ করা।
ইসলামে বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হয়েছে:
- মৃত্যু ব্যাক্তির স্বামী বা স্ত্রী ও পিতা মাতা মোট সম্পত্তির অংশ পাওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি মৃত্যু ব্যাক্তির ছেলে মেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।
- বাবার কন্যারা ৩ ভাবে সম্পত্তির ভাগ পাবেন। যদি ওয়ারিশ হিসাবে একজন কন্যা সন্তান থাকে তাহলে মোট সম্পত্তির ১/২ কন্যা সন্তান পাবেন।
- উত্তরাধিকার যদি একাধিক কন্যা হয় তাহলে সবাই মোট সম্পত্তির সমান ২/৩ অংশ ভাগ পাবেন।
- মৃত্যু ব্যাক্তির কন্যা ও পুত্র উভায় থাকে তাহলে কন্যা ও পুত্র ১ঃ২ অনুপাতে মোট সম্পত্তির অংশ পাবে।
- মৃত্যু ব্যাক্তির কন্যা সন্তান না থাকলে অংশীদারদের ভাগ দেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলে বা ছেলেরা পাবেন।
- মুসলিম আইন অনুযায়ী পিতা মাতা কোনো সন্তানকে ত্যাজ্য করলে ত্যাজ্য বলে গণ্য হয় না। তাই উক্ত সন্তান সম্পত্তির ভাগ থেকে বঞ্চিত হবে না।
- মৃত্যু ব্যাক্তির কোনো উত্তরাধিকার না থাকলে উক্ত ব্যাক্তি জীবিতকালে তার সম্পত্তি কাউকে দেওয়া ব্যবস্থা না করে থাকলে উক্ত সম্পত্তির ওয়ারিশ সরকার হবে।
শেষ কথা
আজকে আলোচনায় আমরা জানলাম মৃত্যু ব্যাক্তির বা পিতা মাতার মোট সম্পত্তি ভাগের নিয়ম। অর্থাৎ বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ছেলে মেয়েরা কতটুকু ভাগ পাবেন। বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন জানার থাকলে কমেন্টে লিখে জানাবেন।
FAQ
বাবা মায়ের সম্পত্তি ভাগের নিয়ম কি আলাদা?
উত্তর: না। বাবা মায়ের সম্পত্তি ভাগের নিয়ম একই। মৃত্যু পিতা মাতার সম্পত্তি ছেলে মেয়েরা একই নিয়মে ভাগ পাবেন।
বাবার সম্পত্তি কে কে ভাগ পাবে?
ইসলামি ও রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা সন্তানরা ভাগ পাবেন। এছাড়াও ভাই, বোন সম্পত্তির ভাগ পাবে।
মেয়েরা বাবার সম্পত্তির কত অংশ ভাগ পাবেন?
মেয়েরা বাবার মোট সম্পত্তির ১/২ অংশ ভাগ পাবেন। বাবার একাধিক মেয়ে থাকলে সবাই সমান ভাগ পাবেন।