পাসপোর্ট ভুল সংশোধন করার নিয়ম ২০২৪
জানুন পাসপোর্ট ভুল সংশোধন করার নিয়ম, সংশোধন করতে কত টাকা লাগে বা পাসপোর্ট সংশোধন ফি এবং কি কি কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট লাগে।
অনেক সময় আমাদের অজান্তেই পাসপোর্টের তথ্য ভুল হতে পারে। এই ভুল তথ্যের জন্য আমাদের পাসপোর্ট সংশোধন করার প্রয়োজন হয়।
আজকের আর্টিকেলে আপনাদের বলবো পাসপোর্ট সংশোধন (Passport correction) করার নিয়ম সম্পর্কে।
পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য সুরক্ষা সেবা বিভাগ হতে সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্যের সাথে মিল রেখে পাসপোর্টের তথ্য সংশোধন করা যাবে।
যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নেই তাদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ, শিক্ষাগত সনদ বিবেচনা করা হবে এবং অনলাইনে পাসপোর্ট রি-ইস্যুর আবেদন করতে হবে।
পাসপোর্ট ভুল সংশোধন করার নিয়ম ২০২৪
আপনাকে একটি নিদিষ্ট ডকুমেন্ট অনুযায়ী পাসপোর্ট ভুল সংশোধন আবেদন করতে হবে। আপনার যদি জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে তাহলে সেই অনুযায়ী সংশোধন করুন।
আর যদি জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকে তাহলে জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র অনুযায়ী পাসপোর্টের ভুল সংশোধন করুন।
তবে, আমার পরামর্শ জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী পাসপোর্ট ভুল সংশোধন করা উচিত।
Passport Correction Process
পাসপোর্ট ভুল সংশোধনের জন্য প্রথমে আপনাকে পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে। এরপর পাসপোর্ট রি-ইস্যুর জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
অনলাইন আবেদন প্রিন্ট করে নির্ধারিত ফি ব্যাংকে প্রদান করে নথিপত্র সহ নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে।
ছবি সহ আরো সহজে জানতে নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করুন।
ধাপ ১ঃ পাসপোর্ট সংশোধন ফরম সংগ্রহ করুন এবং পূরণ করুন
পাসপোর্ট ভুল সংশোধনের জন্য তাদের ওয়েবসাইট হতে ফরম সংগ্রহ করুন। পাসপোর্ট তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন ফরমটি সম্পূর্ণভাবে পূরণ করে। এই ফরম ছাড়া পাসপোর্ট তথ্য সংশোধন করতে পারবেন না।
সঠিকভাবে ফরমটি পূরণ করে পাসপোর্ট রি-ইস্যুর ফি প্রদান করে ব্যাংক নাম, ব্যাংক শাখা, রশিদ নং, তারিখ ইত্যাদি পূরণ করুন। এই তথ্য গুলো পূরণ করবেন অনলাইনে আবেদন করা শেষে যখন ব্যাংকে ফ্রি করবেন সেই রশিদ অনুযায়ী।
চাহিত সংশোধন এর নিচে পাসপোর্টের বর্তমানে প্রদর্শিত তথ্য এর ঘরে পাসপোর্টের বর্তমান ভুল গুলো ফরম অনুযায়ী লিখুন।
এবং ডান পাশে সংশোধিত তথ্য ঘরে পাসপোর্টের ভুল যে তথ্য গুলো সংশোধন করতে চান সেগুলো ফরম অনুযায়ী লিখুন।
মনে করুন, আপনার নাম ভুল হয়েছে। আপনার সঠিক নাম মোঃ খালিদ হাসান কিন্তু ভুল করে হয়ে গেছে মোঃ খালিদ হোসেন।
আপনার ভুল নামটি পাসপোর্টের বর্তমানে প্রদর্শিত তথ্য এর ঘরে লিখুন এবং সঠিক নাম অর্থাৎ যেটা সংশোধন করতে চান সেই নাম সংশোধিত তথ্য ঘরে লিখুন।
এভাবে আপনার যতগুলো তথ্য সংশোধন করতে চান সব গুলো লিখুন।
ধাপ ২ঃ অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করুন
পাসপোর্ট ভুল সংশোধন ফরম সঠিক ভাবে পূরণ করার পরে আপনাকে অনলাইন ই-পাসপোর্ট অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন করে নতুন করে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে।
আপনি নিজের স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা বাজারের কম্পিউটার দোকান থেকে আবেদন করতে পারবেন।
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করার সময় পেমেন্ট মেথড অফলাইন সিলেক্ট করবেন। তাহলে সহজে ব্যাংক চালানের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফ্রি প্রদান করতে পারবেন।
অনলাইনে আবেদন পত্রটি সঠিক ভাবে সাবমিট করার পরে প্রিন্ট সামরি ও অ্যাপ্লিকেশন ফরম প্রিন্টিং বলে দুইটা ডকুমেন্টস দেখানো হবে। এই দুইটা ডকুমেন্টস ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিবেন।
ধাপ ৩ঃ পাসপোর্ট আবেদন ফি প্রদান করুন
আপনি ব্যাংকে গিয়ে পাসপোর্ট আবেদন ফি প্রদান করে জমা রশিদ সংগ্রহ করবেন। প্রায় সকল ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি প্রদান করা যায়।
তাছাড়া যারা অনলাইনে পাসপোর্ট ফি প্রদান করতে চান তারা A Challan এর মাধ্যমে সরাসরি পাসপোর্ট ফি প্রদান করতে পারবেন।
ই-পাসপোর্টের ফি নিচের ফর্ম থেকে জেনে নিন,
ডেলিভারি | ৪৮ পৃষ্ঠা | ৪৮ পৃষ্ঠা | ৬৪ পৃষ্ঠা | ৬৪ পৃষ্ঠা |
মেয়াদ | ৫ বছর | ১০ বছর | ৫ বছর | ১০ বছর |
রেগুলার | ৪,০২৫ টাকা | ৫,৭৫০ টাকা | ৬,৩২৫ টাকা | ৮,০৫০ টাকা |
এক্সপ্রেস | ৬,৩২৫ টাকা | ৮,০৫০ টাকা | ৮,৬২৫ টাকা | ১০,৩৫০ টাকা |
সুপার এক্সপ্রেস | ৮,৬২৫ টাকা | ১০,৩৫০ টাকা | ১২,০৭৫ টাকা | ১৩,৮০০ টাকা |
বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরের সকল ফি'র সাথে ১৫% ভ্যাগ প্রদান করতে হবে।
ধাপ ৪ঃ পাসপোর্ট অফিসে ডকুমেন্টস জমা দিন
পাসপোর্ট তথ্য সংশোধন ফরম, অনলাইন আবেদন ফরম, পাসপোর্ট ফি জমা প্রদান রশিদ সহ অন্যান্য ডকুমেন্টস গুলো নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট অফিসে জমা প্রদান করুন।
নির্ধারিত তারিখে আপনার ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট সহ অন্যান্য বায়োমেট্রিক ডাটা গুলো পাসপোর্ট অফিসে প্রদান করুন।
পাসপোর্ট তথ্য সংশোধনের সকল তথ্য পাসপোর্ট অফিসে জমা দিয়ে ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট সহ অন্যান্য বায়োমেট্রিক ডাটা প্রদান করলে আপনার কাজ শেষ। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনার ই-পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবেন।
পাসপোর্ট সংশোধন করতে কি কি লাগে
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ।
- যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তাদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- পুরাতন পাসপোর্ট এবং তার ফটোকপি।
- লিখিত আবেদনপত্র ও অঙ্গীকারনামা।
- বিদেশি দূতাবাসে আবেদন করতে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড/জব আইডি কার্ড/ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড ইত্যাদি।
পাসপোর্ট সংশোধন জন্ম তারিখ
পাসপোর্টের জন্ম তারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হবে। তবে, সংশোধনের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র / জেএসসি / এসএসসি / এইচএসসি / দাখিল / কারিগরি / উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও সমমানের সনদপত্র দেখাতে হবে।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক যাদের জাতীয় পরিচয় পত্র (NID) নেই তাদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইন কপি দেখাতে হবে।
পাসপোর্ট নাম সংশোধন
আপনার পাসপোর্টে যদি নিজের নাম বা পিতা-মাতার নাম ভুল থাকে তাহলে সংশোধন করা যাবে। নাম সংশোধন করার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় পত্র (NID) বা শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ দেখাতে হবে।
পাসপোর্ট সংশোধন করতে কত টাকা লাগে
পাসপোর্ট ভুল সংশোধন করতে কত টাকা লাগে এই প্রশ্ন অনেকের মনে তৈরি হয়েছে। মনে রাখবেন পাসপোর্ট সংশোধন করতে নতুন পাসপোর্ট ফি সর্বনিন্ম ৪,০২৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০,৩৫০ টাক ভ্যাট সহ লাগে।
পাসপোর্ট সংশোধন করার জন্য অতিরিক্ত কোনো ফি প্রদান করতে হবে না। শুধুমাত্র পাসপোর্ট ফি প্রদান করলে হবে।
শেষ কথা
আজকে আমরা জানলাম পাসপোর্ট ভুল সংশোধন করার নিয়ম, সংশোধন করতে কত টাকা লাগে এবং কি কি কাগজপত্র লাগে ইত্যাদি তথ্য সম্পর্কে।
এই সম্পর্কে কোনো বিষয় জানতে চাইলে কমেন্ট করুন এবং ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। পাসপোর্ট সম্পর্কে আরো তথ্য জানতে নিচের আর্টিকেল গুলো পড়ুন।